আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি  টাকা। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মোট পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

সের কাছে হস্তান্তর করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। ওই প্রতিবেদনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের টাকা পাচারের আনুমানিক এই চিত্র তুলে ধরা হয়। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

এই টাকায় বিদেশে বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ গড়েছে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলারা। অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্যাংক খাতে। দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ পৌনে সাত লাখ কোটি টাকা। এছাড়া শেয়ারবাজার, জ্বালানী ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাতের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সংস্কার কমিশন গঠন করে। অর্থনীতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরার জন্য গঠন করা হয় শ্বেতপত্র প্রণয়ণ কমিটি। তাতে উঠে আসে ভয়ঙ্কর সব চিত্র। প্রতিবেদন অনুযায়ি ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ করছাড়ের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। যা মূলত বাড়ি কেনা ও অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়। টাকা পাচারের বিষয়টিকে অর্থনীতিতে ক্ষতিকর ‘টিউমার’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে লুটপাট সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্যাংক খাতে। ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়া ঋণ ও ঋণের অপব্যবহারের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রীয় মদদে ব্যাংক দখলে সহায়তাও করা হয়। এই খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ পৌনে সাত লাখ কোটি টাকা। ১০ ব্যাংক বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে পরিমাণ মন্দ ঋণের হিসাব মিলেছে তা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু ও ১৪টি মেট্রোরেল করা যেত বলে জানান শ্বেতপত্র কমিটি।

কারসাজি, প্লেসমেন্ট শেয়ার ও আইপিওতে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১ লাখ কোটি বা ১ ট্রিলিয়ন টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। ব্যাংক খাতের অপরাধীরাই শেয়ারবাজারে আস্থা নষ্ট করার পেছনে ছিল বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জ্বালানী খাতেও হয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এলএনজিতে বছরে ক্ষতি তিন হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও প্রকল্প থেকে লুট হয়েছে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্পে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং বাড়তি খরচ হিসেবে এই বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে।